মাশরুম এর উপকারিতা

মাশরুম এর উপকারিতা
5/5 - (1 vote)

মাশরুম সম্পর্কে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে মাশরুম হলো বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতা। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্যে আমার প্রিয় পাঠকদের জন্য সেই বদ্ধমূল ধারণায় কুঠারাঘাত করে শুরুতেই বিনীতভাবে জানাচ্ছি যে মাশরুম এর উপকারিতা  এটি হলো একধরনের সুস্বাদু অত্যধিক পুষ্টিকর, প্রচণ্ড রকমের ঔষধি গুণসম্পন্ন সম্পূর্ণ হালাল সবজি।

 এটার বাইরে মাশরুম নিয়ে আপাতত আপনার আর সামান্যতম নেতিবাচক কিছু ভাবার দরকার নেই। 

এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথার সাজি আমার এই বইয়ের বিভিন্ন পরতে পরতে পাবেন। আপনাদের সদয় জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি যে এ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের দায়িত্বে থাকাকালীন খুলনা বিভাগের ১০টি জেলাতে সর্বপ্রথম মাশরুম চাষের গোড়াপত্তন হয়েছিল আমার হাতেই।

আমার সবচেয়ে বড়ো সফলতা হলো, আমি উদ্‌বুদ্ধ মাগুরার একজন বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন যুবক বাবুল আখতারকে মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলাম, যে কি না আজ শত কোটিরও বেশি টাকার মালিক; সেই আশাব্যঞ্জক কাহিনিও আপনাদেরকে শোনাব।

মাশরুমের সাথে জড়িত থাকাকালীন ২০০৮ সালে চীনের মাশরুমসমৃদ্ধ ফুজিয়ান প্রদেশের ফুজিয়ান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত মাশরুম ইন্সটিটিউটে দুই মাসব্যাপী মাশরুম চাষ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করারও সুযোগ পেয়েছিলাম যেখানে পৃথিবীর ৩৩টি দেশের ৫৭ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন। 

সেই থেকে মাশরুম আমার শরীরের শিরা উপশিরায় প্রতিটি রোমকূপে গভীর মমতায় জড়িয়ে আছে। অতঃপর চাকুরিসূত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন অনুবিভাগে কাজ করলেও মাশরুমের সাথে এখনো রয়েছে আমার নাড়ির টান এবং নিবিড় মেলবন্ধন।

 সবে জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব শেষ করে অবসরোত্তর ছুটিতে রয়েছি। এমন অবসর সময়ে কৃষি বিষয়ক বই প্রকাশনার শীর্ষে অবস্থানকারী “প্রাপ্ত প্রকাশন”র স্বতাধিকারী স্নেহভাজন আমিনুর রহমান এর অনুরোধে আমার হৃদয়তন্ত্রীতে মাশরুমের আরেকটি অনুরণনের সৃষ্টি হলো।

তাই মাশরুমের এ টু জেড তথ্যমালা সংবলিত মাশরুম বিষয়ক অধিক পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি মাশরুমের পূর্ণাঙ্গ গাইড” শিরোনামের একটা পূর্ণাঙ্গ বই লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র। আশা করি মাশরুম ভোক্তা, মাশরুমের সাধারণ চাষি, মাশরুমের বাণিজ্যিক চাষিসহ মাশরুমের সাথে জড়িত শিক্ষক গবেষক সবার

ওয়েস্টার মাশরুম এর উপকারিতা

জন্যে বইটি একটি সুখপাঠ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। সকল শ্রেণির পাঠকের কথা মাথায় রেখে সেভাবেই বইটি সংকলন করতে আমার মাশরুম শীর্ষক মেধার মননশীলতার সর্বোচ্চটুকু প্রয়োগ করতে কার্পণ্য করিনি। 

বাজারে মাশরুম চাষের ওপরে অনেক ধরনের পুস্তক পাওয়া যায় কিন্তু প্রকৃতভাবে মাশরুম চাষের সাথে। প্রত্যক্ষভাবে জড়িত কোনো কৃষিবিদ মাশরুম বিশেষজ্ঞের লেখা মাশরুম শীর্ষক একটা পূর্ণাঙ্গ বই আজ অবধি আমার নজরে আসেনি (থাকলেও থাকতে পারে)। 

তাই এসব কথা বিবেচনায় রেখে মাশরুমের ওপরে এ ধরনের একটা পুস্তক রচনার প্রয়াস পেয়েছি বটে! তবে প্রকল্প চলাকালে প্রশিক্ষণার্থীদের জন্যে প্রস্তুতকৃত মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট থেকে বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু চমকপ্রদ বুকলেট ছাপানো হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্যে প্রস্তুতকৃত সেসব বুকলেটের অনেক ছবি, তথ্য, তত্ত্ব ও উপাত্ত এই পুস্তক রচনায় বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে। 

যে কোনো প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের জ্ঞানের ক্ষেত্র ও গবেষণা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হচ্ছে। কলে মাশরুম বিষয়ক আপডেট তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে এখানে সন্নিবেশ করার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছি মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের ইনচার্জ উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ ফেরদৌস আহমেন ও একই ইন্সটিটিউটের মাশরুম বিশেষজ্ঞ ড. আখতার জাহান কাকনসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে। 

এ ব্যাপারে মাশরুমীয় বাস্তব কিছু চালচিত্র এবং মাশরুম চাষে অভাবনীয় সফলতার তথ্য ও ফটোগ্রাফ পেয়েছি মাগুরা সদর উপজেলার মাশরুম গ্রাম খ্যাত বড়খড়ি গ্রামের ড্রিম মাশরুম সেন্টারের স্বত্বাধিকারী বাবুল আক্তার ও তার সেন্টারে কর্মরত কর্মীদের কাছ থেকে।

আমাদের প্রিয় মাতৃভাষার মাধুর্য এবং আবেগীয় প্রকাশ যেমন অসাধারণ তেমনি এটার বানান নিয়ে রয়েছে বড়ো ধরনের বিভ্রান্তি। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রমিত বাংলা বানান প্রচলনের পর থেকে আরও বিপদাপন্ন হয়েছি আমাদের মতো বয়োবৃদ্ধরা। 

কারণ কবিগুরু, দ্রোহের কবি নজরুল কথাশিল্পী শরৎ বাবুদের অনেক লেখা বানান শৈলী এখন প্রমিত বাংলার কবলে পড়ে ভুল প্রমাণিত হয়েছে; তথাপিও আমি শব্দ লিখন ও ভাষাশৈলী প্রয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের চেষ্টা করেছি। 

এই সম্পূর্ণ পুস্তকের প্রতিটি অক্ষর নিজ হাতে নিজের কম্পিউটারে নিজ আলয়ে বসে টাইপ করেছি। ভাষাগত দিক, বানান শুদ্ধকরণ এবং এটার প্রুফ দেখার প্রাথমিক কাজে আমাকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়ুয়া আমার একমাত্র কন্যা শারারা অরণী। 

সারাক্ষণ আমাকে উৎসাহ প্রদান করেছেন আমার সহধর্মিনী শাহানারা বেগম শেলী, উপপরিচালক, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, মাগুরা এবং ভার্চুয়াল সহযোগিতা ও পুনঃপুন মানসিক শক্তি জুগিয়েছে একমাত্র কর্মজীবী পুত্র শানানুজ্জামান অঙ্কন এবং বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কনিষ্ঠ সহোদর শ ম কামরুজ্জামান ।

বিষাক্ত মাশরুম এর বৈজ্ঞানিক নাম

অতএব, এই পুস্তক সংকলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যাঁরা আমাকে সহায়তা করেছেন, উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়েছেন, তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ ও অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বইটি সম্পর্কে আপনাদের কোনো পরামর্শ বা মতামত থাকলে পরবর্তী সংস্করণে সেটা সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন করতে চেষ্টা করব। 

মাশরুম এমন একটা সবজি যা আপনি অল্প খরচে স্বল্প সময়ে অনায়াসে চাষ করে খেতে পারবেন। এর জন্যে কোনো জায়গা জমির প্রয়োজন নেই; আপনার বাসযোগ্য ঘরের ছোট্ট কোণে যেখানে একটু আলো বাতাস চলাচল করে সেখানে খুব সহজে চাষ করে আপনার প্রতিদিনের পারিবারিক পুষ্টিকর সবজি চাহিদার সবটা মেটাতে পারবেন। সেটা না করতে চাইলে বিশ্বস্ত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে শুকনা বা গুঁড়া মাশরুম কিনে এনেও খেতে পারেন। 

আর যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে বাড়তি আয় করতে চান তবে সেটাও করতে পারবেন প্রাথমিকভাবে খুব কম অর্থ বিনিয়োগ করে। তবে বাজার থেকে বা অন্য কোনো মাশরুম চাষির থেকে মাশরুম কিনে খাবারের আগে সেটার গুণগত মান সম্পর্কে জেনে নিন। 

একইভাবে শুকনা মাশরুম বা গুঁড়া মাশরুমের নামে কেউ যেন আপনাকে কোনো ভেজাল বা বিষাক্ত মাশরুম সরবরাহ না করতে পারে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখবেন। এই বই আপনাকে বিষাক্ত মাশরুম চিনতেও বিশেষভাবে সহায়তা করবে। 

গোটা দেশবাসীর জন্যে আরও একটা আশাপ্রদ খবর হলো মাশরুম চাষের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ সহ পুষ্টিহীনতা নিরসনের জন্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় একটা বড়ো ধরনের প্রকল্প প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সহসাই দেশবাসী সেটার সুফল পাবেন বলে আমি ভীষণভাবে আশাবাদী। 

পরিশেষে একটা কথাই জোর দিয়ে বলব- আপনাদের মন থেকে মাশরুম যে ব্যাঙের ছাতা এমন ভ্রান্ত ধারণা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনি মাশরুম চাষ করতে চাইলে বা কিনে খেতে চাইলে হাত বাড়ালেই এটার একটা যোগসূত্র পেয়ে যাবেন।

 Last, but not least সবাইকে বলব যদি সুস্থ সবল দেহ চান নিয়মিত মাশরুম খান”।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *