মানুষের চিন্তা শক্তি

মানুষের চিন্তা শক্তি ত্রিশ বছর আগে এডুইন সি . বার্নেস আবিষ্কার করেন মানুষ যে সত্যিভাবে এবং সমৃদ্ধি লাভ করে  কথাটি তা কতটা সত্যি । তার এ আবিষ্কার একবারে আসেনি । অল্প অল্প করে তিনি বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন শুরু করেছিলেন বিখ্যাত এডিসনের ব্যবসায়ী সহযোগী হওয়ার তীব্র বাসনা নিয়ে । বার্নেসের আকাঙ্ক্ষার একটি বৈশিষ্ট্য ছিল সুনির্দিষ্ট । তিনি এডিসনের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলেন তার জন্য নয় ।

যখন এই আকাঙ্ক্ষা বা ইমপালস ( তাড়না ) তার মনের মধ্যে প্রথম খেলে যায়  এটিকে নিয়ে কাজ করার মতো অবস্থানে তিনি ছিলেন না । তার সামনে দু’টি কঠিন সমস্যা ছিল । প্রথমত মি . এডিসনের সঙ্গে তার কোনো জানাশোনা ছিল না ।

দ্বিতীয়ত  নিউজার্সির অরেঞ্জে যাওয়ার ট্রেন ভাড়া তার কাছে ছিল না । এসব সমস্যা এ রকম বাসনা পূর্ণ করার জন্য অধিকাংশ মানুষকেই নিরুৎসাহিত করে তুলত কিন্তু বার্নেস ছিলেন ভিন্ন মিশেলে গড়া । বার্নেসের বাসনা কোনো সাধারণ কিছু ছিল না ! তিনি এতটাই দৃঢ়বদ্ধ ছিলেন শেষে সিদ্ধান্ত নেন হাল না ছেড়ে বরং ব্রাইন্ড ব্যাগেজ ’ ভ্রমণ করবেন ।

এর মানে হলো , তিনি মালবাহী রেলগাড়িতে চড়ে ইস্ট অরেঞ্জে গিয়েছিলেন । তিনি মি . ডিসনের গবেষণাগারে পৌঁছে ঘোষণা করেন আবিষ্কর্তার সঙ্গে বাণিজ্য করার মানসে এখানে এসেছেন ।

বার্নেসের সঙ্গে সেই প্রথম সাক্ষাৎকারের বিষয়ে পরে মি . এডিসন বলেছেন  সে আমার সামনে দাঁড়িয়েছিল দেখতে লাগছিল নিতান্তই একজন ভবঘুরের মতো । ওর চেহারার দর্শনে এমন কিছু ছিল যাতে পরিচ্ছন্ন বোঝা যাচ্ছিল সে যে আশায় এসেছে তা পাওয়ার বিষয়ে সংকল্পবদ্ধ ।

মানুষের সঙ্গে দীর্ঘসময় কাজের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারতাম কোনো মানুষ যখন কোনো কিছু গভীরভাবে পেতে চায়  সে তা পাওয়ার জন্য জীবনটা বাজি রাখতে পারে এবং সে তা অবশ্যই অর্জন করে | সে যা চাইছিল আমি তা পাবার জন্য তাকে সুযোগ করে দেই কারণ আমি দেখতে পাচ্ছিলাম ও যা চাইছে তা না পেয়ে ছাড়বে না  সে তার মন ঠিক করে ফেলেছিল এবং এ বিষয়ে ছিল অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ।

পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ এটাই প্রমাণ করে যে আমি ওকে চিনতে ভুল করিনি । প্রথম সাক্ষাৎকারেই কিন্তু এডিসনের সঙ্গে পার্টনারশিপটি পেয়ে যাননি বার্নেস । তবে এডিসনের অফিসে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন তিনি যদিও বেতন ছিল অতি অল্প কিন্তু এটা তাকে সুযোগ দেয় নিজের পণ্যদ্রব্য ’ তার পার্টনারকে প্রদর্শিত করার ।

পৌঁছাতে পারেননি যেটির জন্য তিনি নিজের মনকে প্রস্তুত করেছিলেন সুনির্দিষ্ট প্রধান কয়েক মাস চলে যায় । দৃশ্যত : বার্নেস তখন তার প্রত্যাশিত লক্ষ্যের ধারেকাছেও লক্ষ্য হিসেবে । মনোবিজ্ঞানীরা যথার্থই বলেছেন  যখন কেউ কোন কিছুর জন্য প্রকৃত অর্থেই প্রস্তুত হয় এটি তখন একটি আকার লাভ করে । বার্নেস প্রস্তুত ছিলেন এডিসনের সঙ্গে । বাণিজ্য করার জন্য ।

তিনি নিজেকে একথা বলেননি যে  এসব করে লাভ কী ? আমি বরং একজন সেলসম্যানের চাকরি খুঁজি । তিনি বরং নিজেকে বলেছেন  আমি এখানে এসেছি এডিসনের সঙ্গে কাজ করার জন্য  এতে যদি আমার সারাজীবনও চলে যায় তাই ও সই সুযোগটি যখন এলো ভিন্নরূপে তার আগমন ঘটল । তবে এরকমটিই আশা করেছেন বার্নেস । সুযোগ অনেক সময় চুপিচুপি খিরকির দুয়ার থেকে আসে ।

অনেকেই সেটি বুঝতে পারে না বলে সুযোগ নাগালে পেয়েও হারায় । মি . এডিসন তখন নতুন একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছেন , তখন নাম ছিল এডিসন ডিকটেটিং মেশিন ( এখন সকলে চেনে এডিফোন হিসেবে ) । তার সেলসম্যানরা যন্ত্রটির বিষয়ে খুব একটা উৎসাহ বোধ করেনি । তাদের ধারণা ছিল এটি খুব একটা বিক্রি হবে না । আর বার্নেস এ সুযোগটিই কাজে লাগান । অদ্ভুত দর্শন যন্ত্রটির বিষয়ে শুধু বার্নেস এবং তার আবিষ্কর্তা ছাড়া অন্য কারো কোন আগ্রহ ছিল না । বার্নেস জানতেন তিনি এডিসন ডিকটেটিং মেশিনটি বিক্রি করতে পারবেন ।

তিনি এডিসনকে তা বলেনও এবং বিক্রির সুযোগ পেয়ে যান । তিনি মেশিনটি বিক্রি করেন । সত্যি বলতে কী বিক্রিতে এতটাই সাফল্যের পরিচয় দেন তিনি যে এডিসন তাকে এটি সারাদেশে পরিবেশনা এবং বাজারজাত করার দায়িত্ব দেন বার্নেস মেশিনটি একটি স্লোগানের সাহায্যে বিক্রি করেন তা হলো নু বার্নেস ।  দুজনের এ ব্যবসায়িক মিশন ছিল ত্রিশ বছরেরও বেশি ।

এ বিজনেস বার্নেসকে শুধু ধনীই করেনি  ব্যাপক অর্থে আরেকটি বিষয় তিনি প্রমাণ করেন  কেউ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলেই  ভাবতে পারে এবং সমৃদ্ধশালী হতে পারে ।  বার্নেস ব্যবসা করে দুই বা তিন মিলিয়ন ডলার বা তারও বেশি হাতে পেয়েছিলেন তিনি এর ফলে অনেক বড় একটি সম্পদ অর্জন করেন । কিন্তু তার কাছে এই অর্থমূল্য কিছুই নয় । তিনি স্পর্শের অদম্য চিন্তাকে অর্জন করেন তার সুনির্দিষ্ট জ্ঞানই এটি অর্জনে সহায়তা করেছিল ।

বার্নেস আক্ষরিক অর্থেই নিজেকে বিখ্যাত এডিসনের সঙ্গে পার্টনারশিপ ব্যবসা করার কথা ভেবেছিলেন । নিজেকে তিনি একটি সম্পদ ভাবেন । শুরুতে তার কাছে কিছুই ছিল না  শুধু এই সামর্থ্যটি ছাড়া তিনি যা চান তা জানতেন এবং এ আকাঙ্ক্ষাটি তার মধ্যে ছিল বাস্তবায়ন না হওয়া থাকার মতো সংকল্প তার ভেতরে ছিল ।

ব্যবসা শুরু করার টাকা ছিল না তার । শিক্ষা – দীক্ষা তেমন ভালো ছিল না । কিন্তু তার ভেতরে ছিল ইনিশিয়েটিভ বা উদ্যম , বিশ্বাস এবং জেতার ইচ্ছা । এই অকল্পনীয় শক্তিকে অবলম্বন করে তিনি বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীর এক নম্বর লোকে নিজেকে পরিণত করতে সমর্থ হন ।

এবার অন্য আরেকটি লোকের দিকে আমরা ঢাকাবো যার ধনী হওয়ার প্রচুর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে তা হারায় কারণ  সে যা খুঁজছিল সেই লক্ষ্য থেকে মাত্র তিন হাত দূরে সে দাঁড়িয়ে পড়েছিল ।

সোনা থেকে তিন হাত দূরে

ব্যর্থতার খুব সাধারণ একটি কারণ হলো প্রাথমিক অবস্থায় হাল ছেড়ে দেয়া । প্রত্যেকটি মানুষ কোন না কোন সময়ে ভুলের অপরাধবোধে ভোগে । আর , ইউ . ডার্বির একজন চাচা ছিলেন । তাকে সোনা আবিষ্কারের নেশায় পেয়েছিল । তিনি সোনা খুঁজতে গিয়েছিলেন পশ্চিমে । তিনি কখনো শোনেননি যে পৃথিবীতে যত সোনা আছে তার চেয়ে অনেক বেশি স্বর্ণের মজুত রয়েছে মানুষের মস্তিষ্কে ।

তিনি অন্যদের মতো একটি জায়গা ক্লেইম করে অর্থাৎ নিজের জন্য বেছে নিয়ে বেলচা আর ভারি কুড়াল নিয়ে কাজে নেমে গেলেন । কঠোর খাটনি তবে সোনার প্রতি তার লালসা এ পরিশ্রমের পেছনে কিছুই নয় । কয়েক সপ্তাহ বেদম খাটাখাটি শেষে অবশেষে পুরস্কার চকচকে সোনার আকরের খোঁজ পেলেন ডার্বির চাচা ।

মাটি খুঁড়ে সেই আকর তোলার মতো যন্ত্রপাতি তার কাছে ছিল না । তিনি দ্রুত খনিটি চাপা দিয়ে রেখে বাড়ি ফিরে এলেন যন্ত্রপাতি কেনার জন্য টাকা – পয়সা সংগ্রহ করতে । মেরিল্যান্ডের উইলিয়ামসবার্গে ছিল তার চাচার বাড়ি । তিনি আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশীকে জানালেন কী পেয়েছেন । তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার জন্য টাকা ধার দিল । জাহাজে চাপিয়ে দেয়া হলো সেসব মেশিনারি ।

চাচা এবং ডার্বি ফিরে গেলেন খনিতে কাজ করতে । প্রথম গাড়ি আকরিক তুলে তা জাহাজে করে পাঠিয়ে দেয়া হলো গলিয়ে ফেলার জন্য । গলানো আকরিক থেকে যে পরিমাণ সোনা পাওয়া গেল তাতে বোঝা গেল তারা কলোরাডোর অন্যতম সমৃদ্ধ স্বর্ণখনির মালিক বনে গেছেন । আর কয়েকটি গাড়ি আকরিক তুলে বিক্রি করতে পারলেই ধারদেনা সব শোধ হয়ে যাবে । এরপর শুধু লাভ আর লাভ । কিন্তু চাচা আর ডার্বির আশায় গুঁড়েবালি ।

তারা আর সোনার খনির ধাতুশিরাই খুঁজে পেলেন না । স্রেফ উধাও হয়ে গেছে যেন । তারা ইন্দ্রধনুর শেষ প্রান্তে চলে এসেছিলেন কিন্তু এসে দেখেন শেষে কিছুই নেই  সব ফাঁকা ! তারা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগল  আপ্রাণ চেষ্টা করল গোল্ড ভেইন বা স্বর্ণ ধাতুশিরা খুঁজে বের করতে । কিন্তু এ চেষ্টা সবটাই ব্যর্থ হলো । অবশেষে তারা হাল ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল ।

যন্ত্রপাতিগুলো এক ভাঙারি বা লোহালক্কড় ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে ট্রেনযোগে এল বাড়ি । যারা পুরনো লোহালক্কড় কেনাবেচার ব্যবসা করে তারা সাধারণত বোকা ধরনের মানুষ । এ লোকটি তেমন ছিল না । সে এক মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে এনে ছোটখাটো একটু পর্যবেক্ষণ চালালো ।

ইঞ্জিনিয়ার তাকে বলল  প্রজেক্ট ফেল করার কারণে বিক্রি করে মালিকরা  ফল্ট লাইন সম্পর্কে কিছুই জানত না । সে পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে দেখিয়ে দিল ডার্বিরা যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে দিয়েছিল তার ঠিক তিন হাত দূরেই রয়েছে সেই প্রত্যাশিত ভেইন বা ধাতুশিরা ।

ভাঙারির দোকানদার ওই একটি খনিতে পাওয়া আকরিকের সোনা বিক্রি করে কোটিপতি হয়ে যায় । কারণ সে হাল ছেড়ে দেয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার কথা ভেবেছিল । যন্ত্রপাতি কেনার অধিকাংশ জোগাড় করেছিলেন আর ইউ  ডার্বি । তখন তিনি তরুণ মাত্র । স্বজন এবং প্রতিবেশীরা তাকে বিশ্বাস করতেন বলেই টাকা ধার দিয়েছিলন । তিনি প্রতিটি পাই পয়সা পরিশোধ করেন যদিও এজন্য তাকে গাধার খাটনি খাটতে হয়েছে ।

বহু পরে মি . ডার্বি আবিষ্কার করেন , আকাঙ্ক্ষাকে স্বর্ণে রূপান্তর ঘটানো যায় । এটি তিনি বুঝতে পারেন লাইফ ইন্স্যুওরেন্স ব্যবসায় আসার পর । তার মনে ছিল সোনা থেকে তিন হাত দূরে থেমে যাওয়ার কারণে বিপুল সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল তাই ডার্বি নিজের অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা রেখে নিজেকে বলতেন  আমি সোনার কাছ থেকে তিন হাত দূরে থেমে গিয়েছিলাম লোককে ইন্স্যুওরেন্স করতে বলার পর তারা যখন  না  বলে তবু আমি থেমে থাকব না ।

পঞ্চাশ জনেরও কম মানুষের একটি দল নিয়ে ডার্বি এক বছরে দশ লাখ ডলারেরও বেশি লাইফ ইন্স্যুওরেন্স পলিসি বিক্রি করেছেন । যে কোনো মানুষের জীবনে সাফল্য আসার আগে তাকে নিশ্চিতভাবেই সাময়িক কিছু পরাজয় মেনে নিতে হয় এবং কিছু ব্যর্থতাও যদি পরাজয় একজন মানুষকে ছাপিয়ে যায় তাহলে সে খুব সহজে যে কাজটি করে তা হলো  ওই কাজটি ছেড়ে দেয় । দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই এমনটি করে থাকেন ।

মানুষের চিন্তা শক্তি

তারা ড্রিল মেশিন দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগল আপ্রাণ চেষ্টা করল গোল্ড ভেইন বা স্বর্ণ ধাতুশিরা খুঁজে বের করতে । কিন্তু এ চেষ্টা সবটাই ব্যর্থ হলো । অবশেষে তারা হাল ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল । যন্ত্রপাতিগুলো এক ভাঙারি বা লোহালক্কড় ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে ট্রেনযোগে এল বাড়ি । যারা পুরনো লোহালক্কড় কেনাবেচার ব্যবসা করে তারা সাধারণত বোকা ধরনের মানুষ । এ লোকটি তেমন ছিল না ।

সে এক মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে এনে ছোটখাটো একটু পর্যবেক্ষণ চালালো । ইঞ্জিনিয়ার তাকে বলল প্রজেক্ট ফেল করার কারণে বিক্রি করে মালিকরা ফল্ট লাইন  সম্পর্কে কিছুই জানত না । সে পরীক্ষা – নিরীক্ষা করে দেখিয়ে দিল ডার্বিরা যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে দিয়েছিল তার ঠিক তিন হাত দূরেই রয়েছে সেই প্রত্যাশিত ভেইন বা ধাতুশিরা । ভাঙারির দোকানদার ওই একটি খনিতে পাওয়া আকরিকের সোনা বিক্রি করে কোটিপতি হয়ে যায় ।

কারণ সে হাল ছেড়ে দেয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়ার কথা ভেবেছিল । যন্ত্রপাতি কেনার অধিকাংশ জোগাড় করেছিলেন আর . ইউ . ডার্বি । তখন তিনি তরুণ মাত্র । স্বজন এবং প্রতিবেশীরা তাকে বিশ্বাস করতেন বলেই টাকা ধার দিয়েছিলন ।

তিনি প্রতিটি পাই পয়সা পরিশোধ করেন যদিও এজন্য তাকে গাধার খাটনি খাটতে হয়েছে । বহু পরে মি . ডার্বি আবিষ্কার করেন আকাঙ্ক্ষাকে স্বর্ণে রূপান্তর ঘটানো যায় ।

এটি তিনি বুঝতে পারেন লাইফ ইন্স্যুওরেন্স ব্যবসায় আসার পর । তার মনে ছিল সোনা থেকে তিন হাত দূরে থেমে যাওয়ার কারণে বিপুল সম্পদ হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল  তাই ডার্বি নিজের অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা রেখে নিজেকে বলতেন আমি সোনার কাছ থেকে তিন হাত দূরে থেমে গিয়েছিলাম লোককে ইন্স্যুওরেন্স করতে বলার পর তারা যখন ‘ না ‘ বলেতবু আমি থেমে থাকব না ।

পঞ্চাশ জনেরও কম মানুষের একটি দল নিয়ে ডার্বি এক বছরে দশ লাখ ডলারেরও বেশি লাইফ ইন্স্যুওরেন্স পলিসি বিক্রি করেছেন । যে কোনো মানুষের জীবনে সাফল্য আসার আগে তাকে নিশ্চিতভাবেই সাময়িক কিছু পরাজয় মেনে নিতে হয় এবং কিছু ব্যর্থতাও যদি পরাজয় একজন মানুষকে ছাপিয়ে যায় তাহলে সে খুব সহজে যে কাজটি করে তা হলো  ওই কাজটি ছেড়ে দেয় । দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই এমনটি করে থাকেন ।

এ বইয়ের লেখককে পাঁচশোরও বেশি অত্যন্ত সফল ব্যক্তি বলেছেন তাদের সাফল্য এসেছে ব্যর্থতার পরেই । তারা প্রথম পর্যায়ে পরাজিত হয়েছিলেন কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে সাফল্যের মুখ দেখেছেন । এখানে মি . ডার্বির কিশোর বয়সের একটি গল্প বলি । তার এক চাচার পুরানো একটি ময়দার কল ছিল ।

ওখানে গম ভাঙানো হতো । আর তাকে এ কাজে সাহায্য করতেন ডার্বি 1 একদিন বিকেলে চাচা – ভাতিজা মিলে কাজ করছেন এমন সময় কারখানার দরজা খুলে গেল ভেতরে ঢুকল একটি নিগ্রো ছোট মেয়ে । সে চাচার ভাড়াটে কোনো চাষীর কন্যা । চাচার একটি বড় খামার আছে  সেখানে অনেক কৃষকও পেটেভাতে থাকে ।

চাচা মেয়েটির দিকে মুখ তুলে চাইলেন , কর্কশ গলায় জানতে চাইলেন  কী চাই ? ভীরু গলায় মেয়েটি জবাব দিল  মা ৫০ সেন্টের জন্য পাঠাইছে । এখন টাকা পয়সা দিতে পারব না ঘাউ করে উঠলেন চাচা । যা ভাগ ।জ্বি  ছার বলল মেয়েটি । তবে নড়বার লক্ষণ দেখা গেলো না তার মধ্যে । চাচা আবার নিজের কাজে এমন ব্যস্ত হয়ে পড়লো যে মেয়েটির কথা মনেই রইল না । তবে বেশ খানিক্ষণ কাজ করার দেখেন মেয়েটি যায়নি তখনও গ্যাঁট হয়ে বসেছে । হুংকার দিলেন চাচা  তোকে না বললাম বাড়ি যেতে । এখুনি যা ! মার খাবি কিন্তু ।

ছোট মেয়েটি বলল জি স্যার  কিন্তু এক চুল ও নড়লো না । চাচা এক বস্তা শস্য ফেলতে যাচ্ছিলেন কলের মুখে , মেঝে থেকে একটা কাঠের টুকরো তুলে নিয়ে রাগে গনগনে চেহারায় এগিয়ে গেলেন মেয়েটির দিকে । নিঃশ্বাস বন্ধ করে রইলেন ডার্বি । তিনি নিশ্চিত চাচা মেয়েটাকে পিটিয়ে মেরেই ফেলবেন ।

আর ডার্বির এই চাচাটি ছিলেন খুবই বদমেজাজী । চাচা যখন দোরগোড়ায় পৌঁছেছেন , নিগ্রো মেয়েটি এক কদম সামনে এগিয়ে এলো , চাচার চোখে চোখ রেখে চিল চিৎকার দিল  আমার মায়ের ওই পঞ্চাশ সেন্ট লাগবেই । দাঁড়িয়ে পড়লেন চাচা ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেন এক মুহূর্ত , তারপর লাঠিটা ফেলে দিলেন ।

পকেটে হাত ঢুকিয়ে পঞ্চাশ সেন্ট বের করে মেয়েটিকে দিলেন । মেয়েটি টাকাটা নিয়ে পিছিয়ে গেল দরজায়  এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরল না তার চাচার ওপর থেকে ।

মেয়েটি চলে যাওয়ার পরে চাচা একটি বাক্সের ওপর বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন অনেকক্ষণ । তিনি মেয়েটির সাহসের কথা ভাবছিলেন । মেয়েটি যেন একটি চাবুক কষিয়ে দিয়ে গেছে তাকে । মি . ডার্বিও কিছু ভাবছিলেন । জীবনে এই প্রথম তিনি দেখেছেন কোনো কৃষ্ণাঙ্গ শিশু তার শ্বেতাঙ্গ প্রভুর মুখের ওপর তর্ক করল ।

কীভাবে সে কাজটা করতে পারল ? ডার্বির চাচার হম্বি – তম্বি , তর্জন – গর্জন কোথায় গেল ? তিনি যে একেবারে ভেড়া সাজলেন । বাচ্চাটির মধ্যে এত সাহস কী করে এলো যে তার প্রভুর ওপর সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করল ? এরকম অসংখ্য প্রশ্ন ভিড় করে এল ডার্বির মনে তবে সেসব প্রশ্নের জবাব সেদিন মেলেনি পেয়েছিলেন অনেক বছর পর আমি সেই পুরানো ময়দার কলে গিয়েছিলাম ।

মি . ডার্বি কিশোর বয়সের গল্পটি পুনরাবৃত্তি করে বলেছিলেন । আপনি এ থেকে কী পেলেন ? ওই পুচকে মেয়েটার কি এমন অদ্ভুত সাহস ছিল যা আমার চাচাকে একদম চুপ করিয়ে দিয়েছিল ? তার এ প্রশ্নের জবাব এ বইতে মিলবে । জবাবটি পূর্ণাঙ্গভাবেই দেয়া আছে । বিস্তারিত ব্যাখ্যার কারণে সবাই এটি বুঝতে পারবেন এবং সেই মেয়েটির মতো একই শক্তি প্রয়োগ করতে পারবেন ।

আপনার মনকে সতর্ক রাখুন  তাহলে দেখতে পাবেন কোন অদ্ভুত শক্তি ওই শিশুটিকে রক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছিল , এ শক্তির রোশনাই আপনি আগামী অধ্যায়ে এক ঝলক দেখতে পাবেন । এ বইয়ের কোথাও আপনি একটি আইডিয়া খুঁজে পাবেন যা আপনার রিসেপটিভ পাওয়ার বা উপলব্ধির ক্ষমতাকে দ্রুততর করে তুলবে এবং আপনার নিজের উপকারের জন্য এটি নিজের মতো করে ব্যবহার করবেন ।

মনে রাখবেন এ এক অদম্য ক্ষমতা ! এ ক্ষমতার সচেতনতা আপনার মধ্যে বইয়ের প্রথম অধ্যায় পাঠ করার মধ্যেই চলে আসতে পারে অথবা পরবর্তী অধ্যায়গুলোও পেতে পারেন । এমনকি এটি একটি সিঙ্গল আইডিয়া হিসেবেও আপনার চোখে ধরা পড়তে পারে । অথবা আসতে পারে কোনো পরিষ্কার রূপ ধরে কিংবা শ্যর আকারে । মি . ডার্বি আমাকে বলেছেন তার সাফল্যের পেছনে নিগ্রো মেয়েটির সেদিনকার ঘটনাটি যথেষ্টই প্রভাব রেখেছে ।

তিনি বলেন , যতবারই আমি কোনো ইনসিওরেন্স পলিসি বিক্রিতে বাধার সম্মুখীন হয়েছি , মনে হয়েছে এটি ক্লায়েন্টের কাছে বিক্রি করতে পারব না তবারই সেই ময়দার কলের মেয়েটির ছবি আমার চোখে ভেসে ওঠেছে , দেখেছি তাকে আত্মরক্ষার্থে রোষ কষায়িত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে তখন আমি নিজেকে বলেছি  এই সেলটা আমাকে করতেই হবে । এবং যতগুলো ভালো সেল আমার হয়েছে তার প্রায় সবই ঘটেছে লোকে আমাকে না বলার পর ।

তিনি স্মরণ করেন  সোনা থেকে তিন হাত দূরে থেমে যাওয়ার ভুলের কথাও । তবে বলেন তিনি  এ অভিজ্ঞতা একদিক থেকে আমার জন্য ছিল শাপে বর । এটি আমাকে কাজে লেগে থাকতে শিখিয়েছে এবং সে কাজটি যতই কঠিন হোক না কেন হাল ছাড়তে মানা করেছে  এবং সাফল্য পাবার জন্য এ শিক্ষাটি আমার বড়ই প্রয়োজন আপনি যখন ভাববেন এবং সমৃদ্ধ হতে শুরু করবেন লক্ষ্য করবেন সমৃদ্ধশালীরা তাদের কাজ শুরু করেন মনের একটি বিশেষ অবস্থা নিয়ে তাদের উদ্দেশ্য থাকে সুনির্দিষ্ট ।

আমি পঁচিশ বছর গবেষণায় ব্যায় করেছি , ২৫০০০ এরও বেশি লোকের বিশ্লেষণ করেছি এবং আমিও জানতে চেয়েছি ধনবানরা কীভাবে স্থির একটি মনের অধিকারী হয়ে ওঠেন । ১৯২৯ সালে আমেরিকায় ব্যবসা – বাণিজ্য মহামন্দা শুরু হয় । দীর্ঘ একটা সময় ধরে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছিল । প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ক্ষমতায় আসার পরে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে । মহামন্দা মিলিয়ে যায় ।

যেমন একজন ইলেকট্রিশিয়ান থিয়েটারে এমনভাবে আলোর ব্যবস্থা করেন যাতে আপনি বুঝে উঠবার আগেই দেখতে পান অন্ধকার কেটে চারিদিক ভরে গেছে আলোয় এবং আধারে থাকার ভয়টা মানুষের মন থেকে দূর হয়ে গেছে । খুব সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলে এই দর্শনের বৈশিষ্ট্যগুলো আপনিও আয়তু করতে পারবেন ।

আপনার আর্থিক অবস্থারও উন্নতি ঘটবে এবং আপনি যাতেই হাত ছোয়াবেন , সোনা হয়ে যাবে ।

অসম্ভব মনে হচ্ছে কথাটা ?

মোটেই তা নয় ! মানুষের মূল দুর্বলতার অন্যতম হলো অসম্ভব ‘ শব্দটি । সে জানে কী কী করলে কাজ হবে না । সে জানে কী কী করা যাবে না । এ বইটি তাদের জন্য লেখা হয়েছে যারা সেইসব নিয়ম – কানুনগুলো খুঁজে বেড়ান যা মানুষকে সফল করেছে ।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *