ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জ্ঞানের ধরন দুই প্রকার একটি হলো সাধারণ জ্ঞান অপরটি বিশেষায়িত।সাধারণ জ্ঞান যত ব্যাপকই হোক না কেন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিংবা তাতে বৈচিত্র্য থাকুক , অর্থ উপার্জনের কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের অর্থকরির পরিমাণ কিন্তু বেশি নয় । তারা বিশেষায়িত জ্ঞান নিয়ে শিক্ষা দেন কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশেষ মনোযোগ প্রদান করেন না অথবা এ জ্ঞানের বাবহারও করেন না । জ্ঞান যদি সুবিন্যস্ত না হয় এবং অর্থ উপার্জনের জন্য কোনো অ্যাকশন প্ল্যান না থাকে তাহলে সেই জ্ঞান দিয়ে টাকা আনা যায় না । বুঝতে অক্ষম লাখ লাখ মানুষ বোকার মতো ভাবে জ্ঞানই শক্তি আসলে তা নয় ।

জ্ঞান পরেফ সম্ভাব্য একটি শক্তি মাত্র । এটি তখনই শক্তিতে রূপান্তরিত হয় যখন সুনির্দষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান দ্বারা এটি সুবিন্যস্ত হয় এর একটি নির্দিষ্ট সমাপ্তি থাকে । Education কথাটি এসেছে ল্যটিন শব্দ educo থেকে । এর অর্থ অভ্যন্তরীণ উন্নতি । একজন শিক্ষিত মানুষ তিনি নন যার প্রচুর সাধারণ এবং বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে । একজন শিক্ষিত মানুষ তিনি যিনি তার মনের শক্তির এতটাই উন্নয়ন ঘটিয়েছেন যে তিনি যা চান তাই পেতে পারেন অপরের অধিকার ক্ষুণ্ন না করে । হেনরি ফোর্ড এই সংজ্ঞার আলোকে একজন শিক্ষিত মানুষ যদিও তার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা ছিল খুবই কম ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শিকাগোর একটি সংবাদপত্র তাদের একটি এডিটরিয়ালে হেনরি ফোর্ডকে an ignoraut বলে সম্বোধন করে । মি.ফোর্ড তার তীব্র প্রতিবাদ করে পত্রিকাটির বিরুদ্ধে মামলা করে । মামলা আদালতে উঠলে আ্যাটর্নিরা কাগজটির জন্য জাস্টিফিকেশনের আর্জি জানায় এবং মি.ফোর্ডকে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়া করায় জুরিদের কাছে এ কথা প্রমাণ করতে যে তিনি একজন অজ্ঞ মানুষ ।

আটর্নিরা মি . ফোর্ডকে নানারকম প্রশ্ন করে এটাই প্রমাণ করার জন্য যে গাড়ি নির্মাণে তার বিশেষায়িত জ্ঞান থাকতে পারে বটে আসলে তিনি একজন অজ্ঞ মানুষ । ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা মি ফোর্ডকে যেসব প্রশ্ন হয়েছিল তার খানিকটা উদাহরণ নিম্নরূপ বেনেডিক্ট আরনল্ড কে ছিলেন ? এবং ১৯৭৬ সালের বিদ্রোহ দমন করতে ব্রিটিশরা আমেরিকায় কী পরিমাণ সৈন্য পাঠিয়েছিল ? শেষ প্রশ্নের জবাবে মি.ফোর্ড বলেন ব্রিটিশরা ঠিক কতজন সৈন্য পাঠিয়েছিল সংখ্যা ।

পরিমাণটি বেশ বড়ই ছিল এ ধরনের প্রশ্ন শুনে শুনে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন মি.ফোর্ড এবং একটি বিশেষ আক্রমণাত্মক প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রশ্নকর্তা আইনজীবীর দিকে হাত তুলে বলেন  আপনি আমাকে এইমাত্র যে নির্বোধ প্রশ্নটি করলেন কিংবা এতক্ষণ ধরে যেসব প্রশ্ন করে যাচ্ছেন আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আমার ডেস্কে এক সারি বৈদ্যুতিক পুশ – বাটন রয়েছে সঠিক বোতামটি টিপলেই আমার সহকারীদের ডাকতে পারি এবং তাদের আমার ব্যবসা সংক্রান্ত যে ব্যবসায় আমি সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছি সে বিষয়ে যে কোনো প্রশ্ন করলেই তারা তার জবাব দিতে পারবে ।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

এখন কী আপনি অনুগ্রহ করে বলবেন আমি কেন আপনার প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য সাধারণ জ্ঞান নিয়ে মাথা ঘামাতে যাব যেখানে আমার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পাওয়ার জন্য আমার চারপাশেই নিজের লোক রয়েছে ? আদালতের প্রত্যেকে অনুধাবন করতে পারেন এটি কোনো অজ্ঞ লোকের জবাব নয় , একজন শিক্ষিত মানুষের উত্তর ।

সেই শিক্ষিত যে জানে প্রয়োজনে কোত্থেকে জ্ঞান আহরণ করা যাবে এবং ওই জ্ঞান নির্দিষ্ট প্ল্যান অব অ্যাকশনে কাজে লাগানো যাবে । হেনরি ফোর্ড তার ‘ মাস্টার মাইন্ড ‘ দলটির সাহায্যে সমস্ত বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করতেন এবং তা কাজে লাগিয়ে তিনি আমেরিকার অন্যতম ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন । ওইসব জ্ঞান তার মস্তিষ্কে থাকার প্রয়োজন ছিল না । আপনি অর্থ উপার্জনে আপনার সামর্থ্য আকাঙ্ক্ষায় রূপান্তরিত করার আগে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করে নেবেন ।

এটি অর্জন করার জন্য হয়তো আপনার অধিক পরিমাণ বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রয়োজন হতে পারে । আর সেক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আপনার মাস্টার মাইন্ড গ্রুপ ।এন্ড্রু কার্নেগি স্বীকার করেছিলেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইস্পাত ব্যবসার টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো কিছুই বুঝতেন না । আর জানার খুব যে একটা আগ্রহ ছিল তা – ও নয় । তিনি ইস্পাত ম্যানুফ্যাকচার এবং মার্কেটিংয়ের জন্য যে বিশেষায়িত জ্ঞানটুকু অর্জন করেছিলেন তা পুরোটাই তার মাস্টার মাইন্ড গ্রুপের কাছ থেকে । বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হতে হলে পাওয়ার দরকার।

আর এই পাওয়ার বা শক্তি অর্জিত হয় সুসংগঠিত এবং বুদ্ধিদীপ্ত বিশেষায়িত জ্ঞান থেকে । তবে এ জ্ঞান একজন মানুষের মধ্য যে থাকতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই । এ লেখাটি পাঠকের মনে হয়তো আশা এবং সাহস জুগিয়ে তুলবে যারা সম্পদের মালিক হতে চান কিন্তু বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভ করতে পারেননি । শিক্ষা লাভ করতে না পারার হীনমন্যতায় অনেকেই ভোগেন।

তবে যে মানুষ টাকা বানাতে একদল লোককে ‘ মাস্টার মাইন্ড দল সৃষ্টিতে সক্ষম এবং তাদের পরিচালনাও করতে জানেন , তিনি ওই দলের যে কোনো মানুষের মতোই শিক্ষিত । একটি মনে রাখবেন আপনি যদি হীনমন্যতায় ভোগেন তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্কুলিংয়ে সীমাবদ্ধতা ছিল । টমাস আলভা এডিসন সারাজীবনে মাত্র তিন মাস স্কুলিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন।

কিন্তু তার শিক্ষার অভাব ছিল না এবং গরিবি হালেও তাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়নি । হেনরি ফোর্ড ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন কিন্তু তিনি আর্থিকভাবে নিজেকে দারুণভাবে গড়ে তুলেছিলেন । সফল মানুষ তাদের প্রধান প্রধান উদ্দেশ্য পূরণে কখনো বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জনে পিছ পা হন না । যারা অসফল তারা ভাবে অ্যাকাডেমিক পড়ালেখা খতম করলেই বুঝি সব জ্ঞান আহরণ হয়ে গেল । সত্যি কথা এই  স্কুলিং বা স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে বাস্তব জ্ঞান খুব কমই অর্জন করা যায়।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *