বাটন মাশরুম চাষ পদ্ধতি

বাটন মাশরুম চাষ পদ্ধতি
5/5 - (1 vote)

আমরা আগের অধ্যায়ে বাংলাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় বাটন মাশরুম চাষ পদ্ধতি এবং অধিক চাষকৃত ওয়েস্টার মাশরুমের বীজ উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে চাষ পদ্ধতির বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই অধ্যায়ে আমরা দেশে বিদেশে চাষকৃত আরও কিছু পরিচিত মাশরুমের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোকপাত করতে চেষ্টা করব।

বাটন মাশরুম চাষ পদ্ধতি

বাটন মাশরুমের চাষ পদ্ধতি

বাংলাদেশ ব্যতীত বিশ্বের অনেক দেশে বাটন (Button Mushroom : Agaricus bisporus) মাশরুম অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং মূল্যবান সবজি হিসেবে বিবেচিত। ফুটিং বডি, বাটন বা বোতাম আকৃতির হওয়ায় এই মাশরুমের এমন নামকরণ বলে ধারণা করা হয়। বিশ্বের মোট উৎপাদিত মাশরুমের প্রায় অর্ধেকটাই বাটন মাশরুম।

এটার চাষ পদ্ধতি যেমন ব্যয়বহুল তেমনি এটার বাজার মূল্যও বেশি। শীতকালে আমাদের প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় চাষ করা সম্ভব। তবে বছরের অন্যান্য সময় চাষ করতে হলে সেই ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ক্রীম রং থেকে ধূসর রঙের হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, চীন, নেদারল্যান্ড, পোল্যান্ড, স্পেন ও ভারতের কিছু অংশে বাটন মাশরুমের চাষ করা হয়ে থাকে।

অনুকূল পরিবেশগত আবহাওয়া

কোন অবস্থায় কেমন পরিবেশ দরকার স্পন প্রস্তুতের সময় গজানোর সময় বুদ্ধি পর্যায়ে তাপমাত্রা ১৮-১৮° সেলসিয়াস ১০০০ পিপিৱাম তাপমাত্রা ১৮-১৮° সেলসিয়াস ২০-২৫ সেলসিয়াস 10-100% ৫০০০ পিপিএম এর 40-300% ৪০০-৮০০ পিপিএম বেশি কম জরুরি নয় ৫-৭ ঘণ্টা জরুরি নয় ৫-৭ ঘণ্টা আরে ১৮-২০ দিন ১২-১৮ দিন ৪-৭ দিন

বাটন মাশরুমের চাষ পদ্ধতির ধারাবাহিক প্রক্রিয়া

কম্পোস্ট তৈরি: বিশ্বে ঘোড়ার গোবর ও মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে সাধারণত এই মাশরুম চাষ করা হয়ে থাকে। তবে মাশরুম উন্নয়ন ইন্সটিটিউট শুধুমাত্র খড় ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে বাটন মাশরুম চাষে সফলতা পেয়েছে। কম্পোস্ট তৈরির জন্যে স্বাভাবিক বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে কিন্তু সরাসি সূর্যের আলো পড়ে না এমন স্থান সবচেয়ে উপযোগী।

কম্পোস্ট তৈরির জন্যে যেসব উপকরণ লাগে সেটার একটা তথ্যচিত্র নিচে দেওয়া হলো:

ধানের খড়   =৩০০ কেজি

ইউরিয়া       = ৯ কেজি

টিএসপি      =৬ কেজি

জিপসাম     = ৩ কেজি

চুন              =     ১০ কেজি

দানাদার কীটনাশক (কার্বোফিউরান)   =১৫ কেজি

ব্যাভিস্টিন (Carbendazim 50% WP) ছত্রাকনাশক ৩০ কেজি

উপর্যুক্ত উপকরণসমূহ সমান ৫ ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এরপর ঘড়ের ভাগের ১ ভাগ ৫ ফুট ৫ ফুট স্থানে স্তূপ করে ঝাঁঝরি বা হুজ পাইপের সাহায্যে পানি দিয়ে ভালোভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে। এ সময় লক্ষ রাখতে হবে খড়গুলো এমনভাবে ভেজা থাকে যেন পানি গড়িয়ে না পড়ে।

এভাবে খড় ১ ফুট উঁচু হলে সকল উপকরণের ৫ ভাগের ১ ভাগ ভেজা খড়ের ওপরে ছিটিয়ে দিতে হবে। অনুরূপভাবে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্তর সাজাতে হবে। ৫ম স্তর সাজানোর সময় সময় ২৫০ গ্রাম ১৫০ গ্রাম খড় একবারে না সাজিয়ে কিছু খড় (পঞ্চম স্তরের এক-চতুর্থাংশ) আলাদা করে রাখতে হবে। যা দিয়ে অন্যান্য উপকরণ ছিটানোর পর ঢেকে দিতে হবে এবং হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। এরপর কম্পোস্ট স্তূপটিকে যথাক্রমে ৬ষ্ঠ, ১০ম, ১৩তম, ১৬তম, ১৯তম, ২২তম এবং ২৮তম দিনে ওলট পালট করে দিতে হবে।

বাটন মাশরুমের চাষ তাপমাত্রা

ওলট-পালট করার সময় বাইরের দিকের খড়গুলোকে ভেতরের দিকে এবং ভেতরের দিকের খড়গুলোকে বাইরের দিকে দিতে হবে এবং প্রয়োজনমতো পানি স্প্রে করে ভেজা রাখতে হবে। প্রথম দিকে কম্পোস্ট গাদার তাপমাত্রা ৭০-৭৫° সেলসিয়াস এ উঠে যায়। তাপমাত্রা ৭৫° সেলসিয়াসের ওপরে উঠে গেলে একদিন পর পর উলটিয়ে হালকা পানি স্প্রে করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

কম্পোস্ট ভালোভাবে তৈরি হলে রং গাঢ় বাদামি হবে। অ্যামোনিয়া গ্যাসের গন্ধমুক্ত হবে এবং হাত দিয়ে চাপ দিলে কম্পোস্ট গুঁড়া হয়ে যাবে। এরপর উত্তমরূপে তৈরিকৃত কম্পোস্ট ১২ ইঞ্চিx৯ ইঞ্চি পিপি ব্যাগে ভরে স্পন তৈরি করা হয় । প্রতি প্যাকেটে ৫ কেজির মতো কম্পোস্ট ব্যবহার করা হয়।

আরো পড়ুন= ওয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি

প্রথমে ৫ কেজিতে ৭৫-১০০ গ্রাম মাদার কালচার কম্পোস্টের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে প্যাকেট ভর্তি করা হয়। এক্ষেত্রে কম্পোস্টের আর্দ্রতা ৯২-৯৫% রাখা হয়। আর্দ্রতা নিশ্চিত করার জন্যে প্যাকেটের ওপরে খবরের কাগজ দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয় এবং দিনে ২/৩ বার স্প্রে করে এই আর্দ্রতা নিশ্চিত করা হয়। বাটন মাশরুমের মাইসেলিয়াম ২৫° সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

এভাবে রাখা প্যাকেট ১৫-২০ দিনের মধ্যেই পুরো মাত্রায় সাদা হয়ে যায় যা কেজিং এর উপযুক্ত হয়। কেজিং হলো ৭৫% খামারজাত সার এবং ২৫% বেলে দো-আঁশ মাটি অটোক্লেভে জীবাণুমুক্ত করে বাটন মাশরুমের স্পন প্যাকেটের ওপরে আধা ইঞ্চি থেকে এক ইঞ্চি আস্তরণ দেওয়া হয়।

বাটন মাশরুম চাষঘরে যে তাপমাত্রা থাকে

এরপর প্যাকেটগুলোকে চাষঘরে যেখানে তাপমাত্রা ২০° সেলসিয়াসের নিচে রেখে পানি স্প্রে করা হয়। এ সময় স্পনের আর্দ্রতা ৮৫-৯০% রাখার জন্যে দিনে ৩/৪ বার হালকা স্প্রে করতে হবে। এভাবে পরিচর্যা করলে ১২-১৮ দিনের মধ্যে পিনের মতো মাথা বের হয় এবং ৪-৭ দিনের মধ্যেই মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। মাশরুমগুলো বোতামের মতো আকার ধারণ করলেই অর্থাৎ মাশরুমের ফ্রুটিং বডি ওপেন হওয়ার পূর্বেই তুলে সংগ্রহ করা হয়।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *