কর্মসংস্থান নিয়ে উক্তি

কর্মসংস্থান নিয়ে উক্তি

কর্মসংস্থান নিয়ে উক্তি এর ষষ্ঠ বিলবোর্ডটি হলো কর্মশক্তির প্রয়োগ! মানুষ আকারে মৌমাছি অপেক্ষা লক্ষ-কোটি বড় হলেও মৌমাছি বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে মানুষের চেয়েও লক্ষ-কোটি গুণ বড়।

বিশিষ্ট এক আকাশচারী তার নিজের কর্মের দিকে তাকিয়ে গর্ববোধ করে যা দ্বারা সে বহু উপরে উঠে যেতে পারে, আর নিজেই নিজেকে শুধোলো- “দেখেছো কি অসাধারণ লোক আমি; দেখ কি অসাধারণ এ যন্ত্রটা আমিই তৈরি করেছি; দেখ মানবজাতির জন্য যুগান্তকারী এক অধ্যায়ের সূচনা আমি করেছি; দেখ এ সম্পত্তিটা আমি নিজে তৈরি করেছি।”

বুদ্ধিমান এ ছোট মৌমাছি তার মৌচাকে প্রবেশের পথে পাহারায় ছিল, আকাশচারীর চিৎকার শুনে সে জবাবে বলল-“হ্যাঁ, এটা সত্য তুমি আকাশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে মানে ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছো।

ধুলো ময়লাকে একত্রিত করে তুমি উঁচু এ দালানে পরিণত করেছো; তুমি এ দুর্দান্ত শক্তিশালী ভ্রমণে সক্ষম যন্ত্রটি তৈরি করেছো; তুমি আকাশে নিজেকে দক্ষ করে তুলেছো এবং তোমার থেকে তারাদের দূরত্ব তুমি পরিমাপ করেছো; কিন্তু এতসব অর্জন সত্ত্বেও একটা বিষয় তুমি এখনো আবিষ্কার করতে পারোনি।

আর তাহলো এর ফলে কি কি ঘটতে পারে তার হিসেব তুমি কখনো করোনি। আরো একটা বিষয় সম্বন্ধে তোমার কোনো জ্ঞান নেই আর তা হলো যৌথ কর্মশক্তি । মহাবিশ্বে এমন কিছু কাজ আছে যেখানে একাকী করার চাইতে অনেক অধিক মহান, সেটা তোমাকে এখনো খুঁজে বের করতে হবে।”

“তুমি নিজের স্বার্থে কর্মীদের দ্বারা কাজ করিয়ে তার পুরস্কার তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নাও যেটা তোমার কর্মীদের প্রাপ্য ছিল। তুমি এখনো মৌচাকের মতো কর্মশক্তি আবিষ্কার করতে পারোনি আর এটাই আমাদের মতো এ ছোট মৌমাছিদের ধারণা। মৌচাকের মঙ্গলের জন্য আমরা মধু সংগ্রহ করি, অন্যদিকে তোমরা নিজেদের স্বার্থে তোমাদের সহকর্মীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে টাকার পাহাড় গড়ো।”

কি অসাধারণ এ ছোট্ট প্রাণিটি!

কি অসাধারণ একটা শিক্ষা সে আমাদেরকে দিতে পারে যদি আমরা এটাকে ভালোভাবে দেখি, তার কাজ-কর্মগুলো লক্ষ্য করি এবং তা নিয়ে চিন্তা করি!

পৃথিবীতে মৌমাছিই হলো একমাত্র প্রাণি যারা জন্মগ্রহণ করার পূর্বেই তাদের লিঙ্গ নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে!

মানুষ, তার সব ধরনের বুদ্ধি-বিবেচনা, সুযোগ গ্রহণ, জীববিদ্যা ও মনোবিদ্যা সম্পর্কিত সব রকমের জ্ঞান জড়ো করেও লিঙ্গ পূর্বনির্ধারিত বা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না!

ছোট্ট এ মৌমাছি ইচ্ছানুযায়ী লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারে!

লাইব্রেরিতে গিয়ে মৌমাছির জীবন নিয়ে লিখিত একটা বই কিনুন আর তা বাসায় বসে পাঠ করুন। মৌচাকের কাছে যান, এটার সামনে বসে তাদের কর্মকাণ্ড লক্ষ করুন। কৌতূহলপূর্ণ এ জীব থেকে আপনি এমন অনেক কিছু শিখতে পারবেন যেগুলো সত্যিই আপনার জন্য অনেক কাজে আসবে।

কর্মসংস্থান নিয়ে উক্তি

প্রতিটি মৌচাকে মৌমাছিরা তিনটা দলে বিভক্ত হয়ে থাকে। একটা হলো রাণী, যে হলো সকল মৌমাছির মা বা মহিলা মৌমাছি। সে ডিম পেড়ে তাদের স্বজাতির বৈশিষ্ট্য বাঁচিয়ে রাখে। এটাই হলো তার অন্যতম কাজ। আরেকদল মৌমাছি হলো ড্রোন বা পুং মৌমাছি।

রাণী মৌমাছির পাড়া ডিমের থেকে বাচ্চা ফোটানোর সকল কাজের দায়িত্ব হলো তাদের। তারপর বাকিরা হলো কর্মী মৌমাছি-এরা তুলনামূলক ছোট প্রকৃতির অথচ অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রকৃতির।

যারা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে সেগুলোকে জমিয়ে রাখে বাকি সকল মৌমাছিদের জন্য। তারা মহিলাও নয় আবার পুরুষও নয়।

প্রতিটা মৌচাকে শুধুমাত্র একটা মহিলা বা একটা রাণী মৌমাছি থাকে । খেলার ছলে কোনো বালক যদি ঢিল ছুঁড়ে ঐ রাণী মৌমাছিকে মেরে ফেলে অথবা অন্য কোনো কারণে যদি মারা যায় তবে অন্য পুং মৌমাছি, দ্রুত একটা ডিমে এমন এক উপায়ে তা দেয় যে, পদ্ধতিটা শুধুমাত্র তারাই জানে। যার ফলে দ্রুত নতুন একটা রাণী মৌমাছি জন্ম নেয় ।

প্রকৃতি ঐ নির্দিষ্ট পুং মৌমাছিকে যে কাজের জন্য তৈরি করেছে সে কাজটা শেষ করার পর কর্মী মৌমাছিরা ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে ভবলীলা সাঙ্গ করতে বাধ্য করে। তাদের মধ্যে একটা এথিক্স আছে যার কাজ করার মতো কিছু নেই তাকে অবশ্যই মৃত্যুবরণ করতে হবে! বুদ্ধিদৃপ্ত কাজ

লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন একটা মৌচাকের অধিকাংশ মৌমাছিই কর্মী মৌমাছি! তাদের ক্ষেত্রে প্রকৃতি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তারা যে অনুপাত চায় প্রকৃতি তাদেরকে ঠিক সে অনুপাতে ড্রোন বা পুং মৌমাছি, মহিলা বা রাণী মৌমাছি, আর কর্মী মৌমাছি প্রদান করে।

তবে মৌমাছির জীবনী থেকে মানুষ তার জীবনের সবচেয়ে বড় যে শিক্ষাটি গ্রহণ

করতে পারে তাহলো নিঃস্বার্থপরতা!

মৌমাছিরা সাম্প্রদায়িক মানসিকতা নিয়ে কাজ করে। তারা ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে বলে সর্বজন স্বীকৃত। তারা তাদের ঊর্ধ্বতন মৌমাছির জন্য কাজ করে এবং কখনো তাদের বিরুদ্ধে যায় না।

তারা কিছু নির্দিষ্ট গর্তে মধু সংগ্রহ করে, আর সেখান থেকে পুরো দল যার যতটুকু প্রয়োজন মধু খেয়ে নেয়।

ভাবুন তো স্বার্থবাদী, কৃপণ, দাম্ভিক ব্যক্তি কখনো এমন কাজ করবে! দেওয়ার চেয়ে যদি পাওয়াটা কম হয়ে যায় ভাবুন তো মানুষ কি নিজ শ্রমের উৎপাদিত দ্রব্য ভাগাভাগি করবে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষ কিন্তু মৌমাছিদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে, কিন্তু এমনটা সম্ভাবনা নেই যে সে তার প্রাপ্ত সম্পদ মৌমাছিদের মতো অন্য কারও জন্য ফেলে আসবে এবং মানুষ যখন “সাম্প্রদায়িক সাম্প্রতি” থেকে বিতাড়িত হয় তখন সে প্রাকৃতিক নিয়মের বহির্ভূত হয়ে গেল এবং তখন কি সে তার প্রাপ্যের জন্য সহকর্মীদের সাথে প্রতারণা করা শুরু করে না যেটা তার সহকর্মীরা পুঞ্জীভূত করে রেখেছে?

আমরা প্রকৃতির দৃপ্তকণ্ঠে প্রকৃতির আচার-ব্যবহার জানতে চাইনি, তবে দৃঢ় বিশ্বাস আছে যে প্রকৃতির প্রাচুর্য ভোগ করার আগে আমাদের লোভ সংবরণ করতে হবে, পাওয়ার কথা বাদ দিয়ে দেওয়ার কথা মাথায় রাখতে হবে এবং এটা শেখার জন্য কর্মী মৌমাছির নিঃস্বার্থ কাজের স্বভাব শিখে নিতে হবে!

লেখক প্রশ্নাতীতভাবে এটা জানেন সত্যিকার যে সুখ তিনি ভোগ করছেন তা এসেছে শুধুমাত্র তার সহকর্মীদের সেবার মাধ্যমে, এবং আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে বহু মানুষ এ সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

আপনার অসুখী হওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে চারিদিকে তাকানোর পর, আপনার নিজের মনের দিকে দৃষ্টি দিন, আপনার মনে কোনো চিন্তাটা প্রথমে আসে তা ভেবে দেখুন, আর এতেই আপনার উত্তর খুঁজে পেয়েছেন বলে মনে হয়।

অতি মূল্যবান নিয়ম-নীতি রয়েছে যা সাধারণ একটা ধর্মোপদেশের চেয়ে অনেক বেশি দামি কিছু। এটা আপনাকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করে আর প্রথমেই যে জিনিসটা দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তা নিজের বলে পাওয়ার জন্য সক্ষমতা এনে দেবে।

মানুষ ছোট্ট সেই মৌমাছি থেকে অতি মূল্যবান নিয়মের মধ্যে যে ধারণাটা রয়েছে তা ধরতে পেরেছে কিনা তা কিন্তু আমরা জানি, নাকি মৌমাছি তাদের “অতি কর্মব্যস্ত ভাব” অতি মূল্যবান নিয়মের থেকে শিখেছে কিনা সেটাও আমরা জানি না, কিন্তু আমরা একটা বিষয় খুব ভালো করে জানি আর তাহলো অতি মূল্যবান নিয়মের দর্শনটা মহাকর্ষ বলের মতো অপরিবর্তনীয় যা মহাবিশ্বের সকল গ্রহ-নক্ষত্রকে তাদের স্ব-স্ব স্থানে আটকে রাখে।

আর একজন ব্যক্তি এ বিষয়টা নিয়ে সচেতন হোক বা না হোক, সহকর্মীদের প্রতি তার আচরণের ফলাফল কয়েকগুণ বেড়ে বুমেরাং হয়ে তার কাছে ফিরে আসে। আপনার কর্মীদের প্রতি সব সময় আপনি সচেতন এবং আপনার চিন্তার সাথে তাদের কাজের একতা বের করার জন্য আপনি সর্বদা জোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন! এর থেকে কর্মসংস্থান নিয়ে উক্তি।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *