উদ্যোক্তা পরিকল্পনা

উদ্যোক্তা পরিকল্পনা তৃতীয় চাবিকাঠিটি হলো উদ্যোগ । সাধারণ ভাষায় বলতে গেল , উদ্যোগ বলতে এমন কিছু করাকে বোঝায় যা কেউ বলা ছাড়াই আপনি নিজে থেকে করার তাগিদ অনুভব করেন ।

এর এ সাইনবোর্ডগুলো যিনি তৈরি করেছেন তিনি ভার্জিনিয়ার একেবারে গভীরে প্রবেশ করেছিলেন । তার সামান্য কিছু পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না । যখন সেখানে একজন পানি পরিবহন শ্রমিক হিসেবে খনিতে যোগদান করেছিলেন তখন তার কোনো বাড়ি ছিল না  তবে সামান্য কিছু বন্ধু ছিল সেখানে ।

পানি আনার কাজটা তাকে এতটা ব্যস্তততা দিত না , আর তাই অবসর সময়ে কয়লা পরিবহনকারীদের গাড়ি থেকে মালামাল খালাসে সাহায্য করতো । একদিন কয়লা খনির মালিক এসে দেখলেন এ বালক অবসর সময়ে পরিবহনকারীদেরকে সাহায্য করছে ।

মালিক তাকে দাঁড় করিয়ে জানতে চাইলেন কে তাকে এ অতিরিক্ত কাজ করতে বলেছে । বালক জবাবে বলল এটা করতে আমাকে কেউ বলেনি কিন্তু আমার কিছু অবসর সময় থাকায় ভাবলাম পরিবহন শ্রমিকদের যদি সাহায্য করি সেটা মন্দ হয় না । কথাটা শুনে মালিক সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য হাঁটতে শুরু করলেন ।

কিছুদূর গিয়ে তিনি হঠাৎ বালকের দিকে ফিরে বললেন কাজ শেষে তুমি সন্ধ্যায় আমার অফিসে আসবে । বালক একটু ভয় পেয়ে গেলো । কারণ সে ভেবেছিল যা করতে বলা হয়নি তা করায় না জানি তার চাকরিটাই চলে যায় ।

ভয়ে কিছুটা কাঁপা কাঁপা পায়ে সন্ধ্যায় সে মালিকের অফিসের দিকে যেতে শুরু করল । সে যে ভয় পেয়েছে সেটা মালিকের চোখ এড়াতে পারল না আর তাই দ্রুত তিনি বালককে আশ্বস্ত করলেন যে ভয় পাওয়ার কিছু নেই । বালককে একটা চেয়ারে বসতে বলে জিজ্ঞেস করলেন :

শোন ছোকরা  তুমি কি জান আমাদের এ প্ল্যান্টে কাজ করার জন্য কয়েকশ ‘ শ্রমিক আছে এবং কয়েক কুড়ি ফোরম্যান আছে যাদের কাজ হলো শ্রমিকদের কী করতে হবে তা জানিয়ে দেওয়া এবং সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা তা পর্যালোচনা করার জন্য । এতসব শ্রমিকদের মাঝে তুমিই হলে প্রথম জন যাকে আমার অফিসে ডেকেছি অন্যদের

সাহায্য করতে না বলাতেও যে সাহায্য করেছে । তোমার মধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করার বিরল এ গুণ রয়েছে , আর তুমি যদি সেই গুণের চর্চা করতে থাকো তবে একদিন এ খনি প্ল্যান্টে যে কোনো পদ তুমি চাও তা পাবে । ” এটা বলে খনির মালিক তার কাজে মনোযোগ দিল আর সে বালক অফিস থেকে বেরিয়ে এলো ।

দিনটা ছিল তার জীবনের আনন্দের দিনগুলোর মধ্যে একটা সে অফিস ঢুকেছিল “ চাকরি থেকে অব্যাহতি ” পাওয়ার ভয় নিয়ে আর সেখান থেকে বের হলো অত্যন্ত সুখের খবর নিয়ে । মাত্র পাঁচ বছরের এক হাজারেরও অধিক অধস্তন কর্মী নিয়ে সে ঐ একই খনির জেনারেল ম্যানেজার পদের দায়িত্ব পেলো ।

সে সময়ে পুরো অ্যামেরিকার কয়লা খনির সর্বকনিষ্ঠ জেনারেল ম্যানেজারের খেতাবটিও তার হলো । সকলে তাকে পছন্দ করতো কারণ তার উপর তাদের আস্থা ছিল । সে খনিতে বেতন নেওয়ার ঘরে জানালায় একটা বড় করে লেখা একটা সাইন ছিল।

উদ্যোক্তা পরিকল্পনা আমার সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে

পাঁচ আগে এ প্ল্যান্টের জেনারেল ম্যানেজার দৈনিক পঞ্চাশ পয়সা বেতনের একজন পানি পরিবহন শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো । একদিন খনির মালিক সেই পানি পরিবহনকারী ছেলেটাকে দেখল কয়লা পরিবহনকারীদেরকে সাহায্য করতে । এ কাজের জন্য ছেলেটাকে অতিরিক্ত কোনো পয়সা দেওয়া হতো না ।

তাকে কেউ এ কাজ করতেও বলেনি । সে সাহায্য করতো কারণ সে চাইতো পরিবহন শ্রমিকদের বোঝা যাতে কিছুটা লাঘন হয় । এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারার ক্ষমতা একজন মানুষের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান একটা বিষয় ।

যারা এ জানালা দিয়ে তাদের বেতন তুলতে আসবে তাদের জন্যও সেই পানি পরিবহনকারী ছেলের চাইতেও আরো ভালো পদের দায়িত্ব পাওয়ার যোগ্যতা আছে , আর সে তেমনটা পেতে পারে শুধুমাত্র এ একই ধরনের কাজ করার মাধ্যমে ।

এসব কাজে সহকর্মীকে সাহায্য করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো গুণ থাকতে হয় না , যদি কেউ তা করতে চায় তবে তাকে কোনো কিছুই থামাতে পারে না  এবং কেউ যদি এ পানি পরিবহনকারী বালকের মতো নিজ উদ্যোগে কাজ করে , তবে সে এখানে যে সব কাজ আছে তার মধ্যে সর্বোচ্চ পদটা সে পাবে কারণ কেউ তাকে সেটা থেকে বিরত রাখতে পারবে না ।

আজকে থেকেই সুযোগের সদ্বব্যবহার করা শুরু করা উচিত । যার উদ্যোগ গ্রহণ করার মতো সক্ষমতা আছে তার সংস্পর্শে আসুন , কারণ এটা রোড টু সাকসেস এর সাইনবোর্ডগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ।

এ সাইনবোর্ডের ক্ষেত্রে আপনার জন্য সহজ কিছু নির্দেশনাবলি আছে যেগুলো খুব সহজেই অনুকরণ করা যাবে । আগামী দশ দিন আপনার কর্মক্ষেত্রে করতে বলা হয়নি এমন কিছু কাজ নিজ উদ্যোগে করার ধ্যান – জ্ঞান করে নিন । কি করছেন তা কাউকে জানানো দরকার নেই , কিন্তু নিজের স্থিরকৃত কাজে এগিয়ে যান এবং এ নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করুন ।

আপনার কাজটা যদি এমন হয় যে , যেখানে আপনাকে বলা হয়নি এমন কাজ করতে পারছেন না , তাহলে নিজের কাজের গতি কিছুটা বৃদ্ধি করে দিন এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজের অতিরিক্ত কাজ করতে শুরু করে দিন এবং এত ভালোভাবে কাজগুলো করুন যেমনটা আগে একই সময়ে করে এসেছেন ।

এ অগ্রগতি দশদিন ধরে রাখুন এবং দেখতে পাবেন এ দশদিনে আপনার কর্মীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছেন । দশদিন পরে আরো দেখতে পাবেন একইভাবে বাকি জীবনটাকে নিজ উদ্যোগে কাজ করার মানসিকতা আপনার তৈরি হয়ে গেছে কারণ নিজ উদ্যোগে কাজ করার যে দায়িত্ব আপনার কাঁধে এসে পড়বে সেটার দ্বারা আরো বড় যে জীবনের লক্ষ্য আপনি ঠিক করেছেন তা করার মানসিকতা আপনার মধ্যে জেগে উঠবে ।

নিজ উদ্যোক্তা

বিশ্ব তার সবচেয়ে বড় উপহার , সম্মান এবং ধনসম্পত্তি উভয় ক্ষেত্রে , দান করে শুধুমাত্র একটা বিষয়ের উপর ভিত্তি করে , আর তা হলো নিজ উদ্যোগ ।

নিজ উদ্যোগ মানে কী ?

এটা হলো সেই সঠিক কাজটা করা যেটা করার জন্য আপনাকে কেউ বলে দেয়নি । আপনাকে যা করতে বলা হয়েছে তার পরবর্তী সময়ে যে কাজটা রয়েছে সেটা কিন্তু করতে কেউ বলবে না ।

এটাকে বলা হয় , ধন্যবাদের সাথে লুক্কায়িত বার্তাটা গ্রহণ করা ; যারা এ বার্তাটা গ্রহণ করতে জানে তারাই সম্মান অর্জন করতে পারে কিন্তু এজন্য তাদেরকে সবসময় পুরস্কার পেয়েছে তেমনটা কেউ বলতে পারবে না । এরপর , যাদেরকে দুবার বলার আগ পর্যন্ত কাজটা সে সম্পূর্ণ না করে তারা সম্মানও পায় না আর খুব কমই পুরস্কার তাদের কপালে জোটে । এছাড়া , যারা প্রয়োজনে তাগিদে পেছনে থেকে ঠেলা না দেওয়া পর্যন্ত সঠিক কাজটা করে না , তারা সম্মানের বদলে কেবল ঔদাসীন্যতা আর যৎকিঞ্চিৎ পুরস্কার পায় । .

এ ধরনের ব্যক্তি কেবল হঠাৎ ভাগ্য খুলে যাওয়ার জন্য দিবা স্বপ্নই দেখে । এরপর , এর চেয়ে আরো একটু নিচে নামলে অর্থাৎ যেসব সহকর্মী দেখিয়ে দেওয়ার পরও পরবর্তী সময়ে সঠিক কাজটা চোখে পড়লেও তা করে না ; তারা তো একেবারে কোনো কাজ পাওয়ার যোগ্য নয় , আর তাদের কপালে যেটা আছে তাই জোটে , যদি না তাদের বাবা ধনী ব্যক্তি হয়ে থাকেন , যেখানে নিয়তি ধৈর্যসহকারে তার খুব কাছেই ঘোরাফেরা করে । এ ক্যাটাগরির কোনটিতে আপনি আছেন বলে মনে হয় ?

 

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *